Daily Prothom Barta - Menu
‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ চার বছর জেলে রাখা হয়েছে সংবাদ সম্মেলন করে জানালো: সেলিম
শহর প্রতিনিধি
ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে অনলাইন ক্যাসিনো কার্যক্রমে জড়িয়ে ফাঁসানো হয়েছিল’ বলে অভিযোগ দাবি করেন সেলিম প্রধান ওরফে ডন সেলিম। সাবেক সেনাপ্রধানের ভাইদের সঙ্গে
দ্বন্দ্ব থাকার করনে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ব্যাংককগামী একটি ফ্লাইট থেকে গ্রেপ্তার হওয়া সেলিম প্রধান চার বছর জেল খাটার পর শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবনের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সেলিম প্রধানের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান তার ব্যক্তিগত আইনজীবী কামাল হোসেন। এসময় সেলিমের স্ত্রী আনা প্রধান ও তিন শিশু সন্তানও উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলেন , ‘আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে তাকে হয়রানি’ করা হয়েছিল।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা এলাকার বাসিন্দা সেলিম প্রধান। তিনি আসন্ন রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। একটি বাহিনীর সাবেক প্রধান কর্মকর্তার দুই ভাই (হারিছ আহমেদ ও জোসেফ আহমেদ) পরিকল্পিতভাবে আমাকে ফাঁসিয়েছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া আল জাজিরায় তাদের নিয়ে ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে হারিছ স্পষ্ট করে বলেছেন, আমাকে কীভাবে ফাঁসানো হয়েছে, কীভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে র্যাব দিয়ে আমাকে প্লেন থেকে আটক করা হয়েছে। অথচ এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন অতিক্রম করা মানে হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, আইনি কোনো মামলা বা জটিলতা নেই। তারপরও আমাকে প্লেন থেকে নামিয়ে গ্রেপ্তার করে পরিকল্পিতভাবে নাটক সাজানো হয়েছে।’
‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে তাকে চার বছর জেলে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন সেলিম।
তিনি বলেন, ‘আমি জেলে থাকাবস্থায় আমার শিশু সন্তানদের নিয়ে আদালতের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরেছে আমার স্ত্রী। একজন বাবার কাছ থেকে তার সন্তানদের দূরে রাখা যে কী কষ্টের, তা একমাত্র একজন বাবাই অনুভব করতে পারবে। আমি জেল থেকে বেরিয়ে এইসব ষড়যন্ত্রের কথা গণমাধ্যমে বলে এসেছি। আমি ওই ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার চাই।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় চার বছর জেল খাটা সেলিম প্রধানের দাবি, তিনি কখনোই অনলাইন ক্যাসিনো কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। দীর্ঘদিন জাপানে থাকা সেলিম ‘ট্রেডিং ব্যবসা’ করেন বলেও জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সেলিম বলেন, ‘আমাকে এত ক্যাসিনো ডন বললো, কিন্তু আমার বিরুদ্ধে কোনো ক্যাসিনোর মামলা হয়নি। আর ক্যাসিনোটা কোথায় আছে বলেন তো? আমিও জানতে চাই। আমি যাদের কথা বলছি তারা কী ধরনের ব্যক্তি তা তো আপনারা ভালো করেই জানেন। তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে লড়ব, সেই প্রক্রিয়া অন-প্রসেসিং আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান কখনো খারাপ হতে পারে না। কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানকে যারা অপব্যবহার করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চাই।’
কোনো ফৌজদারি মামলায় দুই বছরের অধিক সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে বিধিনিষেধ রয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিমের আইনজীবী কামাল হোসেন বলেন, ‘দুদক যেমন সাজা বাড়ানোর জন্য আপিল করেছে তেমনি আমরাও সাজা কমানোর আপিল করেছি। বিষয়টি চলমান রয়েছে। যতক্ষণ মামলা শেষ না হয় ততক্ষণ কাউকে দোষী আপনি বলতে পারেন না।’
বর্তমানে তার বিরুদ্ধে মাদক, অর্থপাচারসহ চারটি মামলা চলমান রয়েছে জানিয়ে সেলিম বলেন, ‘আমাকে বিমান থেকে নামানোর আগে কোনো মামলা ছিল না। বিমান থেকে নামানোর পরই সব মামলা দেওয়া হয়েছে।’
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বিমান থেকে নামিয়ে গ্রেপ্তারের ঘটনায় আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে বলেও দাবি করেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘সিভিল এভিয়েশনের আইন অনুযায়ী কাউকে বিমান থেকে নামিয়ে আনতে হলে পূর্বে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট থাকতে হয়। ওয়ারেন্ট না থাকলে কাউকে প্লেন থেকে নামিয়ে আনতে পারে না। প্লেন থেকে নামানোর আগ পর্যন্ত ওয়ারেন্ট তো দূরের কথা আমার বিরুদ্ধে কোনো জিডিও ছিল না। এইখানে আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে।’
নিজের কাছে কোনো ‘অবৈধ অর্থ’ নেই দাবি করে অনলাইন ক্যাসিনো কার্যক্রমে জড়িত থাকা নিয়ে আলোচিত এই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি তো ছোটবেলা থেকেই দেশের বাইরে থেকে আসছি। জাপানে আমি বড় হয়েছি, জাপান থেকে আমেরিকা ও থাইল্যান্ডে থেকেছি। আমার টাকা তো দেশে থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। আমি যা ইনকাম করেছি তা সবই বিদেশে। আমার একটি টাকাও অবৈধ না।’