Daily Prothom Barta - Menu
১১ দফা দাবিতে নৌ শ্রমিকদের কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
মহাপরিচালক শ্রম অধিদপ্তরের মাধ্যমে নৌ-সেক্টরে সকল জাহাজ মালিক ও সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট জাহাজী শ্রমিকদের পক্ষে পেশকৃত ১১ দফা অমিমাংসিত দাবী বাস্তবায়ন ও নৌ- সেক্টরে চলমান সংকট সমাধান এর দাবীতে ৪ মার্চ সন্ধ্যা ৬টা থেকে অবিরাম কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশন। শনিবার ২ মার্চ বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ ঘোষণা দেন ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ। এর আগে শহরের ৫নং ঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীর থেকে বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে এসে জড়ো হয়। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোজাম্মেল হক। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সবুজ শিকদার মাষ্টার। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির উপদেষ্টা মোস্তাফিজুর রহমান, বিআইডব্লিউটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন চুন্নু, বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের কবির হোসেন, আক্তার হোসেন প্রমুখ।
সমাবেশে সবুজ শিকদার মাষ্টার বলেন, নৌ সেক্টরের শ্রমিকরা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন করে যাচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বার বার চক্রান্ত কারীদের কারণে ন্যায্য মজুরী ও কর্মস্থালে শ্রমিকরা নিরাপত্তা পায় না। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পরে বিগত ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ নৌ-শ্রমিকদের বিগত মজুরীর চেয়ে ৬০ শতাংশ মজুরী বৃদ্ধি করে ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে কার্যকর করার লক্ষে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শ্রম অধিদপ্তর হতে একটি গেজেট প্রকাশ করে। কিন্তু কিছু জাহাজ মালিকদের বিরোধীতা ও দালাল শ্রমিক নেতা নামধারীদের কারণে তা আজও অনেক অংশেই বাস্তবায়ন হয় নাই। বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূলের উদ্ধগতির কারণে পরিবার পরিজন নিয়ে আগের বেতনে এখন আর শ্রমিকদের জীবন চালাতে পারছে না। সাম্প্রতিক সময়ে নৌ পথে ব্যাপক ভাবে ডাকাতি, চাঁদাবাজি প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু নৌ প্রশাসন এগুলো বন্ধের কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। জাহাজ মালিকদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দের কারণে নৌ-সেক্টরে চট্টগ্রাম থেকে লাইটারেজ জাহাজের সিরিয়ালের নামে দীর্ঘদিন যাবৎ একটি সমস্যা চলমান রয়েছে। সরকার ও জাহাজ মালিকরা সুষ্ঠু ভাবে সংকট সমাধান না করে নানা ভাবে জাহাজের মাষ্টার এবং ড্রাইভারদের সার্টিফিকেট স্থগিত সহ নানা প্রকার ভিতি সৃষ্টি করে আসছে। ভারতগামী জাহাজী শ্রমিকরা ভারতের সীমানায় তাদের অধিকার পাচ্ছে না। বালুবাহী বাল্কহেড শ্রমিকদের উপর চলছে জুলুম ও নির্যাতন। অবিলম্বে নৌ শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে দাবি আদায়ের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি আমাদের ১১ দফা দাবি মেনে নেয়া না হয় তাহলে ৪ মার্চ সন্ধ্যা ৬টা থেকে আমাদের অবিরাম কর্মবিরতি শুরু হবে। এসব দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি চলবে। নৌ সেক্টরের শ্রমিক ভাইদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আমাদের এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হতে পারে নানা ধরনের প্রপাগান্ডা ছড়াতে পারে কিন্তু আপনারা সেসব প্রপাগান্ডায় কোন ধরনের কান দিবেন না।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ ১১ দফা দাবি উত্থাপন করেন। এগুলো হচ্ছে জাহাজী শ্রমিকদের মালিক কর্তৃক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিস বুক প্রদান ও কল্যান তহবিল ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে কন্টিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন করতে হবে। ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ এর গেজেট অনুযায়ী বকেয়া পাওনা সহ বেতন পরিশোধ করতে হবে। মৃত্যুকালীন ক্ষতিপূরণ ১২ লাখ টাকা প্রদান করতে হবে। ভারতগামী জাহাজী শ্রমিকদের ভারতের সীমানায় ল্যান্ডিং পাস, পোর্ট ভিসা ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। বালুবাহী বাল্কহেড শ্রমিকদের উপর নৌ-প্রশাসনের হয়রানী, মিথ্যা মামলা বন্ধ করতে হবে।নৌ-পথে ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও নৌ-প্রশাসনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। নিরাপদে জাহাজ রাখার পোতাশ্রয় নির্মাণ করতে হবে এবং চরপাড়া সী-বিচ পতেঙ্গা এলাকায় জাহাজের শ্রমিকদের কিনারায় ওঠা নামার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের পর্যাপ্ত ঘাটের ব্যবস্থা করতে হবে। মাষ্টার, ড্রাইভারশীপ পরীক্ষা সহ নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর ও বিআইডব্লিউটিএ এর সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ হবে। চট্টগ্রামে সিরিয়ালের নামে জাহাজ মালিকদের সৃষ্ট সমস্যা সংকট তাদের নিজেদের ব্যাপার, যা জাহাজ মালিকদেরই সমাধান করতে হবে। সকল প্রকার জাহাজী শ্রমিকদের জন্য পোতাশ্রয় নির্মাণ করে ইজারামুক্ত ভাবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থ করতে হবে।